জুম অবসাদ (Zoom Fatigue)

মারজিয়া আল-হাকীম

সম্প্রতি একটি অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আমাদের অনেককেই যেতে হচ্ছে – সেটি এমন যে দিনের বেশিরভাগ সময়েই কম্পিউটার বা মোবাইল মধ্যে পেশাগত কাজ অথবা পড়ালেখা করা। আর এই ঘরবন্দি জীবনে এভাবে স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যেতে ভুমিকা রাখছে ইন্টারনেট। কিন্তু আমরা যারা এভাবে কাজ করছি তাদের অনেকেই হাপিয়ে উঠছি। এই হাপিয়ে ওঠা টি শারীরিক ক্লান্তি নয় বরং শ্রান্তি বা অবসাদ, মেডিক্যাল এর ভাষায় যাকে বলা হয় “ফ্যাটিগ”।

      “ফ্যাটিগ” বলতে বোঝায় মানসিক ও শারীরিক ভাবে প্রচণ্ড ক্লান্ত হয়ে পড়া যা সাধারণ ক্লান্তি থেকেও বেশি কিছু। এটি বিভিন্ন কারনেই হয়ে থাকতে পারে যেমন, কোন অসুখের ফলে বা কোন ঔষধের প্রতিক্রিয়ায়, দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক পরিশ্রম অথবা পর্যাপ্ত শারীরিক কর্মকাণ্ডের অভাব, ঘুমের সমস্যা, মানসিক চাপ, একঘেয়েমি জীবনযাপন অথবা তীব্র শোক ইত্যাদি। চলমান বৈশ্বিক মহমারিতে ইন্টারনেট এ একটি উক্তি বেশ আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে – “যুম ফ্যাটিগ”। নামটি শুনলে মনে হয়ে থাকতে পারে যে এটি মনে হয় যুম এপ্লিকেশন টির একটি প্রভাব। কিন্তু তা নয়। “যুম ফ্যাটিগ” বলতে “অনলাইন এ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে ভিডিও অধিবেশনে অংশগ্রহণ এর ফলে যে মানসিক অবসাদ তৈরি হচ্ছে”, তাকে বোঝানো হচ্ছে। 

      আমরা যে ইন্টারনেট এ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে শুধুমাত্র পেশাগত বা শিক্ষাগত কাজ করছি তা নয়, সামাজিক যোগাযোগ ও বজায় রাখতে হচ্ছে ভিডিও কল এর মাধ্যমে। খেয়াল করে দেখবেন একদিন এ বিভিন্ন উপলক্ষ্যে একের পর এক ভিডিও কল এ অংশগ্রহণ করে একটা পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে আর একটি ভিডিও কল এ অংশগ্রহণ করাটাই বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে। অনেকসময় এটি যথেষ্ট উদ্বেগ ও তৈরি করছে। 

মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা এই ধরণের ফ্যাটিগ এর কথা উল্লেখ করে এই মহামারীর শুরুর দিকেই আমাদের সতর্ক করেছেন।
>> কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন যে একাধিক মিটিং এ অংশগ্রহণ করার ফলেই যে যুম ফ্যাটিগ তৈরি হচ্ছে এমনটি নয়, বরং প্রতিটি কল বা মিটিং এ অনেক গুলো বিষয় একসাথে মাথায় রেখে অনেকটা সময় ধরে অধিকতর মনোযোগ দিয়ে রাখাও এই মানসিক অবসাদ তৈরি করছে।

>>গবেষণায় উঠে এসেছে ইন্টারনেটে এই ধরণের ভিডিও কনফারেস্নিংয়ে মানুষের কথোপকথন এর যে সহজাত প্রবৃত্তি তা ব্যহত হচ্ছে; অর্থাৎ আমরা সাধারণত যেভাবে বাচনিক ও অবাচনিক যোগাযোগ করে অভ্যস্ত তা এখানে সম্ভব হচ্ছে না। যার ফলে একটা পর্যায়ে আমরা হাপিয়ে উঠছি।
•	যেমন ধরুন আপনি একটি ভিডিও কল এ কথা বলছেন, ১০/১৫ জনের মত মানুষ কে খুব ছোট করে দেখা যাচ্ছে। মূল বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি আপনার মাথায় বিভিন্ন ধরণের ভাবনা ঘুরছে যেমন আমাকে কেমন দেখাচ্ছে অথবা আমার কথা কি ঠিকমত শোনা বা বোঝা যাচ্ছে?
•	আবার ধরুন এই ধরণের মিটিং এ একজন একটি কথা বলল যা আসলে কি অর্থবহন করছে তা আপনি ঠিক নিশ্চিত হতে পারছেন না, যা কিনা আপনি সামনাসামনি মানুষটির চেহারা এবং দেহের ভঙ্গী দেখে আরও ভালো বুঝতে পারতেন।
      
      এভাবে দীর্ঘক্ষণ যাবত চলতে থাকলে এক পর্যায়ে আমাদের মস্তিষ্কে যথেষ্ট মানসিক চাপ তৈরি হয় যা এক পর্যায়ে অবসাদ তৈরি করে। ক্ষেত্র বিশেষে বিভিন্ন বিশেসজ্ঞ যুম ফ্যাটিগ তৈরি হওয়ার পিছনে বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। 

      মূল কথা এই যে, এই মহামারিতে ঘরে থেকে একদিনে যেমন আমরা ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে আমাদের পেশাগত, শিক্ষাগত এবং সামাজিক যোগাযোগ চালিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছি, অন্যদিক শারীরিক প্রভাব এর পাশাপাশি তা তৈরি করছে মানসিক অবসাদ যাকে বলা হচ্ছে যুম ফ্যাটিগ। এর দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আপনার দৈনন্দিন রুটিনের অনেক ছোট বড় পরিবর্তন আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের অপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আমরা পরবর্তী লেখায় জানতে পারবো কিভাবে জুম ফ্যাটিগ হতে মুক্তি পেতে পারি।